অফিস সহকারী প্রস্তুতি: সরকারি চাকরির বাজারে যে পদগুলোতে প্রায়শই সবচেয়ে বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়, তার মধ্যে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, কম্পিউটার অপারেটর এবং সাঁটমুদ্রাক্ষরিক অন্যতম। এই পদগুলোতে তুলনামূলক বেশি সংখ্যক শূন্য পদ থাকে, যার কারণে প্রার্থীরাও বেশ আগ্রহী হন। তবে কেবল আগ্রহই যথেষ্ট নয়, একটি পরিকল্পিত এবং কার্যকর প্রস্তুতিই পারে আপনাকে এই প্রতিযোগিতায় সফলতার দিকে নিয়ে যেতে।
অনেক প্রার্থী শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন, কিন্তু এই পদগুলোতে চাকরি পেতে হলে লিখিত ও ব্যাবহারিক উভয় পরীক্ষাতেই সমানভাবে দক্ষ হতে হয়। এই লেখায় আমরা সেই দুটি ধাপের জন্যই একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির কৌশল নিয়ে আলোচনা করব।
এই আর্টিক্যালে যা জানবেন
- এই পদগুলোর জন্য পরীক্ষার পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতা কী।
- লিখিত পরীক্ষার ৭০ নম্বরের জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি কিভাবে নেবেন।
- ব্যাবহারিক পরীক্ষার জন্য কম্পিউটার ও টাইপিংয়ের দক্ষতা কিভাবে বাড়াবেন।
- সাঁটলিপি শেখার গুরুত্ব এবং এর প্রস্তুতির কৌশল।
পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
সাধারণত, এই পদগুলোর জন্য ৭০ নম্বরের একটি লিখিত পরীক্ষা হয়। যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তাদের জন্য থাকে ব্যাবহারিক পরীক্ষা। সাঁটমুদ্রাক্ষরিক পদের প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার পর কম্পিউটার দক্ষতার পাশাপাশি সাঁটলিপির ব্যাবহারিক পরীক্ষায়ও পাস করতে হয়।
প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতা:
- শিক্ষাগত যোগ্যতা: সাধারণত ন্যূনতম উচ্চ মাধ্যমিক পাস চাওয়া হলেও বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্নাতক ডিগ্রি চাওয়া হচ্ছে।
- কম্পিউটার দক্ষতা: টাইপিংয়ে প্রতি মিনিটে বাংলায় ২০-৩০ শব্দ এবং ইংরেজিতে ২০-৩০ শব্দ লেখার গতি থাকা জরুরি। এ ছাড়া মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, ডাটা এন্ট্রি, ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং ই-মেইলে দক্ষতা থাকতে হবে।
- সাঁটলিপি দক্ষতা: সাঁটমুদ্রাক্ষরিক পদের জন্য সাঁটলিপিতে প্রতি মিনিটে বাংলায় ৭০ শব্দ এবং ইংরেজিতে ৪৫ শব্দ লেখার গতি প্রয়োজন।
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি: ৭০ নম্বরের টিপস ও কৌশল
লিখিত পরীক্ষার নম্বর বণ্টন সাধারণত নির্দিষ্ট না থাকলেও একটি সাধারণ কাঠামো অনুসরণ করা হয়। এখানে মোট ৭০ নম্বরের জন্য বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান এবং কম্পিউটার বিষয়ক প্রশ্ন থাকে।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির বিস্তারিত:
- বাংলা: নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড ব্যাকরণ বইটি থেকে ব্যাকরণ অংশের প্রস্তুতি নিন। সাহিত্য অংশের জন্য বাজারের প্রচলিত ভালো মানের একটি গাইড বই যথেষ্ট।
- ইংরেজি: প্রথমে বেসিক গ্রামারগুলো ভালো করে বুঝে নিন। এরপর মুখস্থ করার বিষয়গুলোতে (যেমন: Synonyms, Antonyms, Idioms and Phrases, Appropriate Prepositions) বেশি জোর দিন।
- গণিত: গণিতে ভালো করার জন্য পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির গণিত বইগুলো থেকে বীজগণিত ও পাটিগণিতের মৌলিক বিষয়গুলো ভালোভাবে অনুশীলন করুন।
- সাধারণ জ্ঞান: অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইটি খুব মনোযোগ দিয়ে নোট করে পড়ুন। এ ছাড়া প্রতিদিন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করলে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে আপনার ধারণা স্পষ্ট হবে।
- কম্পিউটার: মাধ্যমিকের কম্পিউটার বইটি এবং বাজারের ভালো মানের একটি গাইড বই থেকে কম্পিউটারের তাত্ত্বিক বিষয়গুলোর প্রস্তুতি নিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
গুরুত্বপূর্ণ টিপস: এসব পদের জন্য আলাদা গাইড বই কেনার প্রয়োজন নেই। বরং ব্যাংক, বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির বিগত বছরের প্রশ্নপত্রগুলো সমাধান করলে আপনার প্রস্তুতি অনেকাংশে সম্পূর্ণ হবে।
ব্যাবহারিক পরীক্ষার প্রস্তুতি: নিজেকে দক্ষ করে তুলুন
লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর আপনার দক্ষতা যাচাই করা হবে ব্যাবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে। এখানে সামান্য ভুলও আপনার সফলতার পথে বাধা হতে পারে।
১. কম্পিউটার ও টাইপিং
বাসায় কম্পিউটার থাকলে নিজেই অনুশীলন শুরু করে দিন। টাইপিংয়ে গতি বাড়ানোর জন্য নিয়মিত অনুশীলন জরুরি। অনলাইনে বা ইউটিউবে এমন অনেক টিউটোরিয়াল পাবেন, যা আপনাকে কি-বোর্ডে আঙুল বসানো এবং টাইপিংয়ের গতি বাড়াতে সাহায্য করবে। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্ট শেখার জন্যও অসংখ্য ভিডিও টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। একটি সহজ উপায় হলো, আপনার মাসিক আয়-ব্যয়ের হিসাবটি এক্সেলে তৈরি করুন অথবা একটি প্রেজেন্টেশনের স্লাইড নিজেই তৈরি করে অনুশীলন করুন।
২. সাঁটলিপি দক্ষতা:
সাঁটমুদ্রাক্ষরিক পদের জন্য সাঁটলিপি শেখা এক ধরনের বাড়তি যোগ্যতা, কারণ অনেকেই এই দক্ষতা জানেন না। আপনি যদি সাঁটলিপি জানেন, তাহলে অন্যদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন। সাঁটলিপি শেখার জন্য বিভিন্ন কোচিং সেন্টার রয়েছে, যেখানে নির্দিষ্ট কোর্স ফির বিনিময়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমেই কেবল এই দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব।
অফিস সহকারী বা কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি পেতে হলে লিখিত ও ব্যাবহারিক উভয় ক্ষেত্রেই সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। লিখিত পরীক্ষার জন্য যেমন বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি জরুরি, তেমনি ব্যাবহারিক পরীক্ষার জন্য নিয়মিত টাইপিং ও কম্পিউটার দক্ষতার অনুশীলন করা আবশ্যক। পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করে এই দুই ধরনের প্রস্তুতি একযোগে চালিয়ে গেলে নিশ্চিতভাবেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।
সম্পর্কিত আর্টিকেল: ক্যারিয়ার টিপস: সফল ক্যারিয়ারের জন্য যে ১০টি ভুল এড়িয়ে চলবেন