কম্পিউটার অপারেশন কোর্স: কি, কেন, খরচ ও চাকরির সুযোগ

কম্পিউটার অপারেশন কোর্স: বর্তমান চাকরির বাজারে কম্পিউটার দক্ষতা একটি মৌলিক চাহিদা, কম্পিউটার অপারেশন কোর্স এখন আর বিলাসিতা নয়। আপনি যে সেক্টরেই কাজ করুন না কেন, ডিজিটাল দুনিয়ায় টিকে থাকতে হলেআপনার কম্পিউটারের মৌলিক জ্ঞান থাকাটা জরুরি। আর এই মৌলিক জ্ঞান অর্জনের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হলো কম্পিউটার অপারেশন কোর্স। কিন্তু অনেকেই জানেন না কম্পিউটার অপারেশন কোর্স আসলে কী, কেন এটি করা উচিত এবং কোর্স শেষে কী ধরনের চাকরির সুযোগ আছে। এই আর্টিকেলে আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।

এই লেখায় যা জানবেন

  • কম্পিউটার অপারেশন কোর্স বলতে আসলে কী বোঝায়।
  • কেন এই কোর্সটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • কোর্সের মূল সিলেবাসে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে।
  • সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কোর্সের সম্ভাব্য খরচ কেমন।
  • কোর্স শেষে কী ধরনের চাকরির সুযোগ রয়েছে।

কম্পিউটার অপারেশন কোর্স কি?

সহজ কথায়, কম্পিউটার অপারেশন কোর্স হলো কম্পিউটারের ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের একটি প্রশিক্ষণ। এই কোর্সে একজন শিক্ষার্থীকে শেখানো হয় কীভাবে একটি কম্পিউটার চালু ও বন্ধ করতে হয়, ফাইল ও ফোল্ডার সাজিয়ে রাখতে হয়, ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতে হয় এবং বিভিন্ন অফিস অ্যাপ্লিকেশন যেমন Microsoft Word, Excel, এবং PowerPoint ব্যবহার করতে হয়।

এই কোর্সটি মূলত বেসিক বা মৌলিক কম্পিউটার দক্ষতা শেখানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। কোর্স শেষে একজন শিক্ষার্থী যেকোনো অফিসের দৈনন্দিন কাজগুলো যেমন: ডকুমেন্ট তৈরি, ডেটা এন্ট্রি, প্রেজেন্টেশন তৈরি এবং ইমেইল যোগাযোগের কাজগুলো দক্ষতার সাথে করতে পারেন।

কেন এই কোর্সটি করবেন?

কম্পিউটার অপারেশন কোর্সটি শুধু একটি সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য নয়, বরং এটি আপনার ক্যারিয়ারের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে। এর কিছু প্রধান কারণ নিচে আলোচনা করা হলো:

  • চাকরির বাজারে অপরিহার্য দক্ষতা: প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী বা ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের মতো পদে লোক নিয়োগ করা হয়। এসব পদে কম্পিউটার দক্ষতা থাকা বাধ্যতামূলক।
  • ক্যারিয়ারের অগ্রগতি: আপনার যদি কম্পিউটারের মৌলিক জ্ঞান থাকে, তাহলে আপনি যেকোনো কাজ দ্রুত ও দক্ষতার সাথে করতে পারবেন। এটি আপনার ক্যারিয়ারের অগ্রগতিকে সহজ করে তুলবে।
  • ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুযোগ: এই কোর্সের মাধ্যমে শেখা দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আপনি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে ডেটা এন্ট্রি, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডকুমেন্ট ফরম্যাটিংয়ের কাজ করে ঘরে বসে আয় করতে পারেন।
  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: কম্পিউটারের সঠিক ব্যবহার জানতে পারলে আপনার প্রযুক্তিগত জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে, যা আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

কম্পিউটার অপারেশন কোর্সের খরচ

কম্পিউটার অপারেশন কোর্সের খরচ প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হয়। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যায়।

১. সরকারি প্রতিষ্ঠান:

বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (TTC), যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (BITAC)-এর মাধ্যমে স্বল্প খরচে এই কোর্সটি পরিচালনা করে।

  • কোর্সের মেয়াদ: সাধারণত ৩ থেকে ৬ মাস।
  • খরচ: সরকারি কোর্সের খরচ খুবই কম, অনেক সময় শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন ফি বা পরীক্ষা ফি বাবদ কিছু টাকা নেওয়া হয়। যেমন: কিছু প্রতিষ্ঠানে ৪৮/- টাকা বা সামান্য কিছু টাকায় পুরো কোর্সটি করা যায়।

২. বেসরকারি প্রতিষ্ঠান:

বেসরকারি আইটি ইনস্টিটিউট বা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে কোর্সের ফি তুলনামূলকভাবে বেশি।

  • কোর্সের মেয়াদ: সাধারণত ২ থেকে ৬ মাস।
  • খরচ: কোর্সের মান, সময়কাল এবং প্রতিষ্ঠানের সুনামের উপর নির্ভর করে খরচ ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। অনেক প্রতিষ্ঠান কিস্তিতে টাকা পরিশোধের সুযোগও দিয়ে থাকে।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস: সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করলে খরচ কম হয় এবং সার্টিফিকেটের গ্রহণযোগ্যতাও বেশি থাকে। তাই সুযোগ থাকলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির চেষ্টা করা ভালো।

কোর্সের সিলেবাস: কী কী শিখবেন?

একটি আদর্শ কম্পিউটার অপারেশন কোর্সে সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে:

  • কম্পিউটারের মৌলিক ধারণা: হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেম (Windows), এবং কম্পিউটার অন/অফ করার নিয়ম।
  • Microsoft Word: ডকুমেন্ট তৈরি, এডিটিং, ফরম্যাটিং, টেবিল ও ছবি যোগ করা, প্রিন্ট করা।
  • Microsoft Excel: ডেটা এন্ট্রি, স্প্রেডশিট তৈরি, সূত্র (Formula) ও ফাংশন ব্যবহার করে হিসাব-নিকাশ করা।
  • Microsoft PowerPoint: প্রেজেন্টেশন তৈরি, স্লাইড ডিজাইন, অ্যানিমেশন ও ট্রানজিশন ব্যবহার।
  • ইন্টারনেট ও ইমেইল: ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ইমেইল অ্যাকাউন্ট খোলা, ইমেইল পাঠানো ও গ্রহণ করা।
  • ফাইল ম্যানেজমেন্ট: ফাইল ও ফোল্ডার তৈরি, সংরক্ষণ, কপি ও ডিলিট করার নিয়ম।
  • টাইপিং: বাংলা ও ইংরেজি টাইপিংয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি।

চাকরির সুযোগ: কোথায় কাজ করবেন?

কম্পিউটার অপারেশন কোর্স সম্পন্ন করার পর আপনি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিম্নলিখিত পদগুলোতে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন:

  • কম্পিউটার অপারেটর: ডেটা এন্ট্রি, ফাইল ম্যানেজমেন্ট এবং ডকুমেন্ট প্রসেসিংয়ের কাজ করা।
  • ডেটা এন্ট্রি অপারেটর: বিভিন্ন তথ্য কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়া।
  • অফিস সহকারী: অফিসের দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজকর্মে সহায়তা করা।
  • ফ্রিল্যান্সার: অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ডেটা এন্ট্রি, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা অন্যান্য ডিজিটাল সার্ভিস দেওয়া।
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: স্কুল-কলেজ বা কোচিং সেন্টারে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করা।
  • অন্যান্য ক্ষেত্র: ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, মিডিয়া হাউজ এবং বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও কম্পিউটার দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীর চাহিদা রয়েছে।

সাধারণত এসব পদে শুরুতে বেতন ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা বা তার বেশি হতে পারে, যা অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়।

কম্পিউটার অপারেশন কোর্স একটি যুগোপযোগী এবং কার্যকর প্রশিক্ষণ, যা আপনাকে বর্তমান চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে আপনি শুধু একটি সার্টিফিকেটই পাবেন না, বরং এমন একটি দক্ষতা অর্জন করবেন যা আপনার ক্যারিয়ারের প্রতিটি ধাপে কাজে লাগবে। তাই, আপনার যদি কম্পিউটারের মৌলিক জ্ঞান না থাকে, তাহলে দেরি না করে আজই একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যান।

সম্পর্কিত আর্টিকেলঅফিস সহকারী প্রস্তুতি: কম্পিউটার অপারেটর ও সাঁটমুদ্রাক্ষরিক গাইড

Leave a Comment