বাংলাদেশে সোনার দাম প্রতিদিনই মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কেউ বিনিয়োগের জন্য, কেউ আবার গহনা কেনার জন্য প্রতিদিনের সোনার দাম জানতে চান। আজ আমরা দেখব ২০২৫ সালের বর্তমান সোনার দাম, ক্যারেটভেদে পার্থক্য, এবং সোনা কেনার সময় যা জানা জরুরি।
আজকের সোনার দামের আপডেট – 18, 21, 22 Carat Gold Price – Today Gold Price in Bangladesh 2025
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ঘোষিত সর্বশেষ দামে দেখা যাচ্ছে—২০২৫ সালে সোনার বাজার বেশ স্থিতিশীল হলেও এখনো উচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে।
| সোনার ধরন | প্রতি ভরি দাম (টাকা) | প্রতি গ্রাম দাম (টাকা) |
|---|---|---|
| ২২ ক্যারেট সোনা | ২,১৭,৩৮২ | ১৮,৬৩৭ |
| ২১ ক্যারেট সোনা | ২,০৭,৫০৩ | ১৭,৭৯০ |
| ১৮ ক্যারেট সোনা | ১,৭৭,৮৫৩ | ১৫,২৪৮ |
| সনাতন পদ্ধতি | ১,৪৮,০৭৪ | ১২,৬৯৫ |
১ ভরি = ১১.৬৬৪ গ্রাম — বাংলাদেশে সোনার ওজন পরিমাপের সবচেয়ে প্রচলিত একক।
ক্যারেট অনুযায়ী সোনার পার্থক্য
সোনা কেনার সময় “ক্যারেট” শব্দটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি সোনার বিশুদ্ধতা বোঝায়—যত বেশি ক্যারেট, তত বেশি খাঁটি সোনা।
- ২২ ক্যারেট সোনা (৯১.৬৭% খাঁটি):
গহনা তৈরিতে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এতে অল্প পরিমাণ তামা বা রূপা মেশানো থাকে, যা গহনাকে শক্ত ও টেকসই করে। - ২১ ক্যারেট সোনা (৮৭.৫% খাঁটি):
দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ভালো বিকল্প। দাম কিছুটা কম হলেও স্থায়িত্ব বেশ ভালো। - ১৮ ক্যারেট সোনা (৭৫% খাঁটি):
আধুনিক ডিজাইনের গহনা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। শক্ত হলেও বিশুদ্ধতা তুলনামূলক কম।
বিনিয়োগের জন্য: ২৪ ক্যারেট সোনা সবচেয়ে বিশুদ্ধ (৯৯.৯৯%) হলেও বাংলাদেশে এটি সাধারণত বার বা কয়েন আকারে পাওয়া যায়, গহনায় নয়।
সোনার দামের ওঠানামার কারণ
সোনার দাম কখনো এক জায়গায় স্থির থাকে না। প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক ও দেশীয় কারণগুলো এর ওপর প্রভাব ফেলে।
- আন্তর্জাতিক বাজার: বিশ্ববাজারে সোনার দর বাড়লে বাংলাদেশের বাজারও প্রভাবিত হয়।
- ডলার ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার: ডলার শক্তিশালী হলে সোনা আমদানির খরচ বাড়ে, ফলে দামও বৃদ্ধি পায়।
- উৎসব ও বিয়ের মৌসুম: এই সময়গুলোতে গহনার চাহিদা বাড়ে, ফলে দামের উত্থান ঘটে।
- বাজুস ও সরকারি নীতিমালা: ভ্যাট, মজুরি ও আমদানি করের পরিবর্তন সোনার দামে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
সোনা কেনার আগে যা জানা উচিত
সোনা কেনা কেবল আবেগ নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সিদ্ধান্তও। তাই সচেতন থাকা জরুরি।
- হলমার্ক চিহ্ন দেখুন: ২২ ক্যারেটের গহনায় সাধারণত “916” বা “22K” লেখা থাকে।
- অনুমোদিত দোকান থেকে কিনুন: বাজুস অনুমোদিত বা স্বনামধন্য জুয়েলার্স বেছে নিন।
- ওজন ও মূল্য যাচাই করুন: ১ ভরি = ১১.৬৬৪ গ্রাম – এই হিসেবে দাম যাচাই করুন।
- মজুরি ও ভ্যাট জানুন: ডিজাইন ও শ্রমের খরচসহ মোট দাম নিশ্চিত করে নিন।
- বিনিয়োগের ক্ষেত্রে: বার বা কয়েন আকারে বিশুদ্ধ সোনা কেনা অধিক নিরাপদ।
আসল ও নকল সোনা চেনার উপায়
বাংলাদেশে নকল সোনা বিক্রির ঝুঁকি থাকায়, কিছু সাধারণ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা যায়—
- হলমার্ক দেখা: আসল সোনায় সর্বদা হলমার্ক থাকে।
- চুম্বক পরীক্ষা: সোনা চুম্বকে আকর্ষিত হয় না।
- জলের পরীক্ষা: সোনা সবসময় পানির নিচে ডুবে যায়, ভাসে না।
- ভিনেগার পরীক্ষা: আসল সোনায় ভিনেগার দিলে রঙ পরিবর্তন হয় না।
সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বাজুস অনুমোদিত দোকান থেকে কেনা ও সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা।
বিনিয়োগ নাকি গহনা — কোনটা সঠিক সিদ্ধান্ত?
যদি আপনি বিনিয়োগের জন্য কিনতে চান, তাহলে দাম কিছুটা কমলে কেনা সবচেয়ে ভালো সময়। সোনা দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে কাজ করে।
আর যদি গহনা কেনার উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে বিশুদ্ধতা, ডিজাইন ও দাম—এই তিন দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। দাম যতই বাড়ুক, গহনার মান ও স্থায়িত্বও তত গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: আজকের ২২ ক্যারেট সোনার দাম কত?
উত্তর: আজ ২২ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরি দাম প্রায় ২,১৭,৩৮২ টাকা।
প্রশ্ন: ১৮ ক্যারেট সোনার দাম কত?
উত্তর: ১৮ ক্যারেট সোনার দাম প্রায় ১,৭৭,৮৫৩ টাকা প্রতি ভরি।
প্রশ্ন: ১ ভরি সোনা কত গ্রাম?
উত্তর: ১ ভরি সোনা = ১১.৬৬৪ গ্রাম।
প্রশ্ন: সোনার দাম কেন বাড়ে?
উত্তর: বিশ্ববাজারের উত্থান, ডলারের দর, দেশীয় চাহিদা ও নীতিগত কারণ এর জন্য দাম বাড়ে।
উপসংহার
২০২৫ সালে বাংলাদেশে সোনার দাম অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিতবাহী একটি বিষয়। ২২ ক্যারেট সোনার দাম দুই লক্ষ টাকার ওপরে থাকা সত্ত্বেও এটির চাহিদা অবিচল। যারা বিনিয়োগ বা গহনা কেনার চিন্তা করছেন, তাদের উচিত বাজারের দৈনন্দিন আপডেট জেনে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া। কারণ সোনা শুধু গহনা নয়, এটি অর্থনৈতিক নিরাপত্তার একটি বিশ্বস্ত প্রতীক।